দেশর অগ্রগতি গতিশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব নগণ্য : –হোসেন জিল্লুর রহমান

অর্থনীতির ৩০ দিন সংবাদ :
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এসব ৫ আগষ্ট ২০২৪ পালিয়ে যাওয়া সরকারের বয়ান, আমাদের এ পুরোনো বয়ান এখন ফেলে দিতে হবে। এ দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা গতিশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব নগণ্য।
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার রাজধানীর হোটেলে ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম (বিবিএফ) আয়োজিত ‘বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের করণীয় ও এফবিসিসিআই এর ভূমিকা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কথা যখন আমরা বলি, তখন খুব সহজেই আমরা আত্মতুষ্টির ট্রাপের মধ্যে ঢুকে যায়। আগেও গিয়েছি, এখনো যাচ্ছি। কিন্তু আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি তার গতি খুব কম। আমাদের অর্থনীতির গতি নাই, ব্যবসা বাণিজ্যে গতি নেই। দারিদ্র্যের হার এখন উল্টোপথে, দেশের বেকারত্বের হার ক্রমশ বেড়ে গেছে, সেটা এখন মহামারি আকারে পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া শিক্ষায় প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার বেশ বেড়ে গেছে। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এগুলো সাংঘর্ষিক, অসংগতিপূর্ণ।
ড. হোসেন আরও বলেন, আমরা বিগত ১৫ বছরে কর্তৃত্ববাদ শাসনে ভয়াবহতায় গোষ্ঠীতন্ত্র দেখেছি। তবে এ গোষ্ঠীতন্ত্র দমন করতে গিয়ে বর্তমান সরকার বেসরকারি ব্যবসায়ীদের কাঠগড়ায় তুলছে, সেটা ঠিক নয়। আমাদের একটি নতুন প্রবৃদ্ধির চালক দরকার। যা আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, অর্থনীতির চাকাকে শক্তিশালী ও গতাশীল করবে। সেটা পোশাকের বাহিরে কৃষি, ওষুধ, আইটি, চামড়া বা অন্য কোনো খাত থেকে আবিষ্কার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন কেরন হকস বে অটোমোবাইলস লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আবদুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রফতানি প্রায় ৬৫ শতাংশ ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। ফলে কয়েকটি গন্তব্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে আমাদের। তবে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নতুন বাজারে প্রবেশে শুল্ক-কোটা বাধা, মান নিয়ন্ত্রণের কঠোরতা ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ঘাটতি বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, অবকাঠামোগত ঘাটতি, জ্বালানি সংকট, ডলার সংকট ও নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত। তাই ব্যবসায়ীদের বিকল্প বাজার সন্ধান, রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্য, বন্দর আধুনিকায়ন এবং ই-কমার্সের প্রসারে মনোযোগী হতে হবে। একইসঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে টিকে থাকতে এফবিসিসিআইকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।
আবদুল হক বলেন, ব্যবসায়ীদের বর্তমান অবস্থা এতিমের মতো’ আমরা কার কাছে যাবো, কোথায় যাবো, কী করবো বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করে পোর্ট চার্জ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল্লাহ চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি পালিয়ে যাওয়া সরকারের আমলে এফবিসিসিআই পীর মাশায়েকদের প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছিল। মূলত সংগঠনটি এেকবারে অকার্যকর ছিল এবং সংগঠনটি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের পর সংগঠনটির নেতৃত্বে একজন সাবেক আমলাকে বসানো হয়েছে, যার ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কোন ধারনা ও অভিজ্ঞতা নেই।
এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক মোঃ খুরশিদ আলী মোল্লার সভাপতিত্বে বিবিএফ এর ওই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, এফবিসিসিআই এর সাবেক সহসভাপতি আবুল কাসেম হায়দার, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক পরিচালক আবদুল হককে ফুলের তোড়া দিয়ে শুবেচ্ছা জানিয়ে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আবদুল হক রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি ও হকস বে অটোমোবাইলস লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বর্স্থতমানের এই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে হলে দ্রুত সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে একটি নির্বাচিত পরিচালক পর্ষদের হাতে এফবিসিসিআই’র নেতৃত্ব হস্তান্তর করা অত্যন্ত জরুরি বলে মত দিয়েছেন সেমিনারে উপস্থিত সকল ব্যবসায়ী নেতারা।