

খোন্দকার জিল্লুর রহমান :
গত পনের খেকে সতের বছরে দেশের আর্থিক অবস্থা ক্রমান্ময়ে উন্নতির দিকে না গিয়ে আসঙ্কাজনক হারে নিম্নমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার কারনে মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিট অতিক্রম করে সেইসাথে জিডিপির হার নেমে আসে প্রায় ৫ শতাংশেরও নিচে। দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে উন্নয়নের নামে লুটপাট, অর্থ পাচার, সর্বখাতে ট্যাক্স বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করার মাধ্যমে দেশের আর্থিক অবকাঠামোকে পঙ্গুকরে দিয়ে ছাত্র জনতার সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মুখে দিন দুপুরে বিশ্বের প্রায় দেড় হাজার কোটি মানুষের বিবেক অবাক করে দিয়ে গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ একটা পতিত স্বৈরাচারী সরকার তার সমস্ত এমপি মন্ত্রী পরিষদ এবং তাঁর সকল সুবিধা ভোগিসহ পদ পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এর তিন দিনেরও বেশি সময় পরে ৮ আগষ্ট ২০২৪ বিপ্লবী ছাত্র জনতার মতামতের ভিত্তিতে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়, যার প্রধান ইপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড, মুহাম্মদ ইউনুস। গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় বিষ্টি অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। এরই মধ্যে প্রায় বছরান্তে আইন সৃক্সক্ষলার কিঞ্চিত অবনতি হলেও দ্রব্যমূল্যের সহনীয় মাত্রা বৈদেশিক ঋন পরিশোধ, লুটপাট ও অর্থ পাচার বন্ধসহ জনমনে স্বস্থিরতা ফিরে আসে। প্রিপারেশন নিয়ে কখনো যুদ্ধ হয়না, ধাওয়ার সাথে পাল্টা ধাওয়া করেই অধিকার আদায় করতে হয়, এ অবস্থা থেকে তড়িৎ পরিত্রাণ পেতে হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী গভর্নরের উচিত ছিল স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ১০০০ এবং ৫০০ টাকার ব্যাংক নোট প্রথমেই বাতিল করে অতিদ্রুত আর্থিক অবস্থা স্বাভাবিক করা এবং দেশে প্রমাণবিহীনভাবে কোন ডুপ্লিকেট ব্যাংকনোট চালু হয়েছে কিনা তা দেখা। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক রিপোর্ট দেখা যায় গত ১৫ থেকে ১৭ বছরে পতিত সরকারের আমলে দেশ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। তবে এসব ডকুমেন্টেড বা নথিবদ্ধ করা সময়সাপেক্ষ। এখন সেই কাজ চলছে। সবকিছু ঠিকঠিকভাবে সম্পন্ন করা গেলে পরবর্তীতে পাচার হওয়া ডলার ফেরত আনতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএফআইইউ প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় গভর্নর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যৌথ তদন্ত দল কাজ করছে। প্রয়োজনে আরও দল করা হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকসহ রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে সর্বমোট ১৭ হাজার ৩৪৫টি সন্দেহজনক লেনদেন কার্যক্রম (এসটিআর/এসএআর) সংক্রান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছে বিএফআইইউ, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২২ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। বিএফআইইউ’র ২০২৩-২৪ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে ১১৪টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থায় পাঠিয়েছে এবং ১ হাজার ২২০টি তথ্য আদান-প্রদান করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। আর মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদারকরণের ফলে বাসেল অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (এএমএল) ২০২৪ এর সূচকে বাংলাদেশ ১৩ ধাপ এগিয়ে ৫৯ নম্বরে অবস্থান করছে।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথা গভর্নর প্রভাবশালী ফ্যাসিশক্তির চাপে থাকলেও আর্থিক খাতে দ্রুত সুফল পাবার জন্য এখনো ১০০০ এবং ৫০০ টাকার ব্যাংকনোট স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে বাতিল করে পাচার হওয়া ডলার ফেরত আনার মাধ্যমে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে দেশ আর্থিক দুরবস্থা মুক্তি পেত বলে সুশীল সমাজ এবং দেশের প্রায় ১৮ কোটি লোকের বিশ্বাস।