এ্যপথাস আলসার – Aphthous Ulcer

ডা. খোন্দকার ছাফারা রহমান
সাধারণত আমাদের মুখের ভেতর যে সকল যন্ত্রণাদায়ক আলসার গুলো হয়ে থাকে তার ভেতর সবচেয়ে কমন হলো এ্যপথাস আলসার । এই আলসারকে রিকারেন্ট এ্যপথাস স্টোমাটাইটিস (Recurrent Aphthous Stomatitis) বা ক্যানকার সোর (Canker Sore) ও বলা হয়ে থাকে ।
সাধারণত যে কোন বয়সে এই আলসার হতে পারে। তবে কৈশোর, যৌবনকালে এটি বেশিরভাগ দেখা যায়। এই আলসারটি এতটাই যন্ত্রণাদায়ক হয় যে সাধারণত এটি যখন হয় তখন রোগী বেশ অস্বস্তিকর অবস্থা বোধ করে। তবে সবচেয়ে দারুণ বিষয় হলো এই আলসার তৈরি হওয়ার নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। তবে কিছু প্রভাবজনিত কারণ আছে যা এই আলসারের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয় । মানসিক দুশ্চিন্তা একটি বড় কারণ হিসেবে ধরা হয় যার ফলে এই আলসার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি যে পরীক্ষার পূর্ববর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদেও মধ্যে এই আলসারটি হওয়ার প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করি। মুখের যে কোন ধরনের ট্রমাও এই আলসার এর উদ্ভাবক হতে পারে । ট্রমা হতে পারে দাঁতের সাথে মুখের নরম মিউকাস অংশে ঘষা লাগা বা কামড় লাগা। এমনকি ব্রাশ করার সময় ব্রাশের ঘষা থেকে আঘাত পাওয়া, আবার কেউ যদি মুখের ভেতর কোন ধরনের কৃত্রিম বস্তু ব্যবহার করে যেমন আলগা দাঁত, আঁকাবাঁকা দাঁত সোজা করার জন্য ব্যবহৃত উপাদান, অর্থডনটিক এ্যপলায়েন্সেস (Braces)। সেগুলোর সাথে রিপিটেড ঘর্ষণ বা ধাক্কা থেকেও আলসার এর সূচনা হতে পারে।
টিনেজার সাধারণত মেয়েদের এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের এই আলসারটি কিছুটা বেশি ঘটতে দেখা যায় তাদের মাসিক চলাকালীন সময়ে বা মাসিক গ্রাব শুরু হবার কিছুটা সময় পূর্বে। এর কারণ হলো মাসিকের সময় প্রোজেস্টেরন হরমোনের লেভেল বেশি থাকে, বিশেষ করে চক্রকালীন লুটিয়াল ফেজে । আবার গর্ভাবস্থায়ও কিছুটা সময় এটি হতে পারে। যার কারণ হলো গর্ভাবস্থায় মাতৃ দেহের প্রায় সকল হরমোনগুলো পরিমাণে বেশি নিঃসৃত হয়।
কিছু সংখ্যকদের ক্ষেত্রে Sensitivity reaction ফলস্বরূপও এই আলসার তৈরি হতে দেখা যায়; যেমন এসিডিক ফল বা টক জাতীয় খাবার (স্ট্রবেরি, লেবু, আনারস, মাশরুম ইত্যাদি) যা বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মুখোগহ্বরে সেখানেও এই আলসার তৈরি হয়।
রক্তস্বল্পতা (Iron Deficiency Anaemia) ফলিক এসিড এমনকি ভিটামিন সল্পতা (VitaminB12) থেকেও এই আনসার এর সূত্রপাত হতে পারে। ধূমপান করার কারণেও মুখোগহ্ববরের নরম মিউকোসাতে ইরিটেশন হয় যার ফলে আলসার হতে পারে।
কিছু বিশেষ রোগ আছে যেমন Celiac disease, Pernicious Anaemia- তেও এই আলসার যেতে পারে । দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি যারা কিনা কোন রোগে আক্রান্ত কিংবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন তাদের ক্ষেত্রেও এই আলসার দেখা যায়। যেমন HIV, Neutropeni।
এ্যপথাস আলসার দেখতে গোলাকার বা ডিম্বাকার হতে পারে । মুখ ও গালের যে নরম অংশ, বিশেষ করে ঠোঁটের ভিতরের দিকে, মাড়িতে, জিহ্বাতে, তালুর পেছনে এটি বেশি দেখা যায়। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো এই আলসারের একটি নির্দিষ্ট লাইনিং বা বাউন্ডারি থাকে যা দেখে এই আলসারকে অন্যান্য আলসার থেকে আলাদা করা যায়। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হল তীব্র যন্ত্রণা যা অন্যান্য আলসার থেকে এই আলসারে বেশি হয়। এই আলসারের ক্ষতটি দেখতে লালচে গোলাকার বা ডিম্বাকার ক্ষত যার চারপাশে একটি হলুদ বা সাদা লাইনিং থাকে।
এ্যপথাস আলসার তিন ধরনের হতে পারে –

  • Minor Aphthous Ulcer
  • Major Aphthous Ulcer
  • Herpetiform Aphthous Ulcer
    Minor Aphthous Ulcerসবচেয়ে বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে এবং এটি সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এ সময় কিছু উপায় অবলম্বনে মাধ্যমে তীব্র যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত ঝাল বা মশলাদার খাবার পরিহার করা, এমনকি ঝাঁজালো ড্রিঙ্কস বা জুস না গ্রহণ করার মাধ্যমে যন্ত্রণা কম হতে পারে। ভিটামিন, ফলেট ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবারগুলো বেশি করে গ্রহণ করা, প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টও নেয়া যেতে পারে। কিছু জপল বা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন Apsol, Bonjela। ঘরোয়া পদ্ধতি যেমন এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলিকুচি করলেও ব্যথা এবং ঘা উপশম হতে পারে। খাবার সোডা পানিতে মিশিয়ে কুলিকুচি করার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়।